বাংলা নাম : জলঢোঁড়া সাপ
ইংরেজী নাম : Checkered Keelback Snake
বৈজ্ঞানিক নাম : Xenochrophis piscator
বিষের ধরণ: সম্পূর্ণ নির্বিষ/Nonvenomous
Colubridae পরিবারের সদস্য জলঢোঁড়া বাংলাদেশের অন্যতম পরিচিত একটি সাপ। সারা দেশেই কমবেশি এদের দেখতে পাওয়া যায়। অঞ্চলভেদে এদের ঢোঁড়া, ধোরা, ডোরা, পাইন্যা সাপ ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। এরা পুকুর, খাল, নদী অর্থাৎ জলজ পরিবেশে বাস করে।

দৈহিক বৈশিষ্ট্য: জলঢোঁড়া সাধারণত হলুদ-কালো ছককাটা রঙের হয়ে থাকে।
ঢোঁড়ার হলুদ বডিতে দাবার বোর্ডে র মত কালো ছক কাটা প্যাটার্ন থাকে। এজন্য এদের Checkered বলা হয়। হলুদ ছাড়াও লালচে, সবুজাভ ঢোঁড়া দেখতে পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রেও তাদের বডিতে ছক কাটা প্যাটার্ন থাকবে [অনেক সময় তা ঝাপসা হতে পারে]। পেট সাদা। অনেক সময় পেটে কালো দাগ থাকে।
ঢোঁড়ার চোখ থেকে দুইটি কালো দাগ চোয়াল পর্যন্ত নেমে আসবে। ঢোঁড়ার উপর চোয়ালের (upper labials) ৪র্থ এবং ৫ম আইশ চোখের সাথে সংযুক্ত থাকবে। এর ডর্সাল স্কেল (dorsal scale) Keeled (অমসৃণ) আঁশযুক্ত।
জলঢোঁড়া সাধারণত ৩ থেকে ৩.৫ ফুটের মত লম্বা হয়ে থাকে। আমরা সাধারণত ছোট জলঢোঁড়া দেখে অভ্যস্ত হলেও এরা ৫ ফুটের বড়ও হতে পারে।
ঢোঁড়া একাকি জীবনযাপন করে৷ এরা দিন এবং রাতে সমান ভাবে অ্যাক্টিভ থাকে। semi-aquatic হওয়ায় সচারাচর পানি থেকে দূরে যায় না। piscator হওয়ায় খুব ভালো সাতার কাটতে পারে।
জীবনকাল: প্রায় ১০ বছর

বংশবিস্তার: জলঢোঁড়া একটি oviparous সাপ। অর্থাৎ এটি ডিম পারে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এদের মেটিং সিজন। এরা সাধারণত জলাশয়ের পাশে, গর্তে, পাতার স্তুপে গড়ে ৫০/৭০ টা পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত রেকর্ড একটি ঢোঁড়া ৯০ টি ডিম পেড়েছে। ডিমের খোলস নরম এবং আঠালো তাই একটার সাথে আরেকটা লেগে থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত নারী সাপ ডিম পাহারা দেয়। মে-জুনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
তবে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়ত সাপের ব্রিডিং টাইম পরিবর্তন হচ্ছে।
স্বভাব: এই সাপের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি অত্যন্ত রাগী, বদমেজাজি। রেগে গেলে গলা প্রসারিত করে ভয় দেখায়। কামড়ে ধরলে সহজে ছাড়তে চায় না। যতগুলো নির্বিষ সাপ আছে তাদের মধ্যে জলঢোঁড়ার কামড়ে একটু বেশি জ্বালাপোড়া করে এবং পরবর্তীতে সেই জায়গায়টা চুলকায়। কারণ এদের মুখে প্রচুর জীবাণু থাকে। বেশিরভাগ সময় এদের দাঁত ভেঙ্গে কামড়ের জায়গায় আটকে জায়গায়। যার কারণে ইনফেকশন হতে পারে। শত্রুকে বিভ্রান্ত করতে লেজ খসিয়ে পালানোর রেকর্ড রয়েছে।
জলঢোরা কামড় দিলে করণীয়: দাঁত কামড়ের জায়গায় আটকে যায় বলে মাথার চূল বা সূতার দুইদিকে ধরে বাইটের স্থানে টান দিতে হবে।এতে দাঁত থাকলে উঠে আসবে। ক্ষতস্থান সাবান বা অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শে টিটেনাস ইনজেকশন নিতে হবে। সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করতে হতে পারে।
লেখা: ফেরদৌস আলম
ছবি: Indika Jayatissa ও সংগৃহীত।
সাপ সম্পর্কে বিষদে জানতে ও নিকটবর্তী রেসকিউয়ারের সাথে যোগাযোগ করতে আমাদের মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন।
অন্যান্য সাপ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন।