কালাচ – Common Krait

পাতি কেউটে Common Krait

বাংলা নাম : পাতি কেউটে / কালাচ

ইংরেজী নাম : Common Krait

বৈজ্ঞানিক নাম : Bungarus caeruleus

প্রচলিত নাম: অঞ্চলভেদে এদের কালাচ, কেউটে, কালাজ, কালান্তর, কালান্তরা, কালচিতি, ডোমনাচিতি, শাহ কানন, শিয়রচাঁদা, নিয়রচাঁদা, শাঁখাচিতি, চামরকোষা, ঘামচাটা নামে ডাকা হয়।

বিষের ধরন: এদের বিষ মূলত Neurotoxin-নিউরোটক্সিন (যা প্রি-সিন্যাপটিক এবং পোস্ট-সিন্যাপটিক স্নায়ুসমূহে আঘাত হানে)। Deadly Venomous / প্রাণঘাতী বিষধর।

উল্লেখ্য: সকল ক্রেইটই Neurotoxin বিষ সমৃদ্ধ।

খাদ্য তালিকা: কালাচ এর প্রধান খাদ্য সাপ৷ এটি একটি মাংসাশী প্রাণী এবং ক্রেইটদের প্রিয় খাবার হচ্ছে অন্য প্রজাতির সাপ। সেটা বিষধর হোক বা অ-বিষধর। এইজন্য এদের Ophiophagus/অফিওফাগাস বলা হয়।

তবে নিজ প্রজাতির সাপও এদের খাদ্য তালিকায় আছে। স্ব-গোত্রীয় তুলনামূলক ছোট সাপ গুলো বড় সাপেদের পছন্দের খাবার। তবে অনেক সময় বাসা বাড়িতে ঢুকে ছোট পাখি, পাখির ডিম, মুরগির ডিম, বাচ্চা এবং ছোট ছোট প্রাণী যেমন ইঁদুর, ব্যাঙ, টিকটিকি, গিরগিটি, মাছ ইত্যাদি খেয়ে থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক বা জুভেনাইল রা কীট-পতঙ্গ, মাকড়সা ইত্যাদি খেয়ে থাকে।

বাসস্থান: কমন ক্রেইট জলাশয় ও তার আশে পাশে থাকতে পছন্দ করে। ভেজা-স্যাতস্যাতে পরিবেশ, ঘাসযুক্ত মাঠ, চাষের জমি, বসতবাড়িতে এদের দেখতে পাওয়া যায়।

অঞ্চল: রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল,ঢাকা ও রংপুর বিভাগের একাংশে এদের দেখা যায়। সিলেট আর চট্টগ্রাম বিভাগে কমন ক্রেইট পাওয়া যায় না। আবার চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চল ব্যতীত সারাদেশেই ওয়ালস ক্রেইট পাওয়া যায়।

দৈহিক বৈশিষ্ট্য: কালাচ এর দেহের রঙ কালো, কালচে বাদামি, এবং নীলচে কালো বর্ণের হয়ে থাকে।

কালো শরীরের উপরে জোড়ায় জোড়ায় সাদা ব্যান্ড/রিং দেখে এদেরকে চেনা যায়। ঘাড়ের কিছু অংশ পর থেকে, জোড়ায় জোড়ায় সাদা ব্যান্ড লক্ষ্য করা যায়, যা একদম লেজের শেষ ভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত।

কমন ক্রেইটের ক্ষেত্রে রিং দুটি যুক্ত অবস্থায় কাছাকাছি থাকে এবং তুলনামূলকভাবে রিং গুলোর মধ্যে ২:২ দূরত্বে অবস্থান করে ২টা বাই ২ টা। অপরদিকে ওয়ালস ক্রেইটের রিংগুলো একটা আরেকটা থেকে আলাদা অবস্থায় থাকে এবং একটা রিং থেকে আরেকটা রিং এর দূরত্ব ১:১ ভাবে থাকে মানে ১টা বাই ১ টা।

এদের ঘাড় থেকে সাদা ফোঁটা ফোঁটা দাগ রয়েছে। এদের শরীরে ব্যান্ডের উপরিভাগ তথা শির-দাড়ার ওপর দিয়ে ফোটা-ফোটা বিন্দু লক্ষ্য করা যায়। জোড়া ব্যান্ডগুলো দেহের মধ্যভাগ থেকে অধিক স্পষ্ট হয় এবং লেজের শেষ ভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।

ওয়ালস ক্রেইটের শির-দাড়া উঁচু হয়, কমনের ক্ষেত্রে যেটা দেহের সাথে মিশে থাকে।

চোখ কুচকুচে কালো। এদের দেহের নীচের অংশ (মুখ এবং পেট এর নীচে) সাদা বর্ণের।

আশেঁর উজ্জলতা কমন ক্রেইটের তুলনায় ওয়ালস ক্রেইটের বেশি হয়।

অপরদিকে কমন ক্রেইটের ঘাড় ওয়ালস ক্রেইটের তুলনায় খানিকটা চিকন হয়।

এদের পৃষ্ঠীয় মেরুদন্ডীয় আঁশ অন্যান্য ক্রেইট প্রজাতির সাপের মতই ‘হেক্সাগোনাল’ আকৃতির। কিন্তু ওয়ালস ক্রেইটের দেহ ত্রিভুজাকৃতির হয় আর কমন ক্রেইটের দেহ গোলগাল হয়। দুটো সাপের ক্ষেত্রেই মাথার আকৃতি অবিকল এক হলেও ওয়ালস ক্রেইটের মাথা কমন ক্রেইটের তুলনায় একটু বেশি চওড়া হয়।

অন্যান্য ক্রেইটের ন্যায় এরাও নিশাচর, রাতে শিকার এবং চলাচল করে। ক্রেইট প্রজাতির সকল সাপ ই প্রচন্ড রকমের শক্তিশালী হয়।

স্বভাব: সকল প্রজাতির ক্রেইট সাপই নিশাচর। এরা দিনের তুলনায় রাতে বেশী সক্রিয় থাকে। মূলত রাতেই এরা শিকারের সন্ধানে বের হয় আর এই সময়ই মানুষের সাথে এদের বেশী সংঘাত ঘটে। কখনো দিনের আলো চোখে পড়লে এরা নিজেদের শরীরে মাথা গুজে রাখে।

কালাচ অত্যন্ত ক্ষীপ্র এবং তীব্র বিষধর সাপ৷ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাপ্ত সাপগুলোর মধ্যে, এদেরকেই সবচেয়ে বিষধর হিসেবে ধরা হয়৷ এদের নিয়ে একটি কথা প্রচলিত আছে, ‘এরা মানুষের ঘামের গন্ধে এসে কামড়ায়’। যদিও এটা সম্পুর্ণ ভিত্তিহীন কথা। শীতের সময়ে এরা উষ্ণতার খোঁজে কিংবা শিকার করার জন্য অনেক সময় মানুষের বিছানায় উঠে পরে। তখন ভুলবশত এদের গায়ে আঘাত লাগলে কিংবা নড়াচড়া করার ফলে, এরা শিকার ভেবে কামড় দেয়।

প্রজননঃ ক্রেইট প্রজাতির সব সাপই ‘Oviparous’ অর্থাৎ মা সাপেরা ডিম পেরে বাচ্চা উৎপাদন করে। এরা নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেটিং করে, মেটিং এর কিছুদিন পর ফেব্রুয়ারিতে ডিম পাড়া শুরু করে। এরা মোট ১০-১২ টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। এপ্রিলে বাচ্চা ফুটে। বাচ্চার দৈর্ঘ্য: ২৫-২৭ cm।

কমন ক্রেইটের গড় দৈর্ঘ্য: ৯০-১২০ cm। সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য: ১৬৫ cm। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ কমন ক্রেইটের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৪-৫ ফুট পর্যন্ত হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ওয়ালস ক্রেইটের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৬ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।

কামড়ের লক্ষণ ও চিকিৎসা: বিষ দাঁত ছোট ও সুক্ষ হওয়ায় এদের কামড়ের দাগ স্পষ্ট বোঝা যায় না এবং কামড়ের স্থানে ব্যাথা অনুভূত হয় না, কোনও জ্বালা-যন্ত্রণাও থাকে না।

পেটে ব্যাথা, বমি ভাব, পেশী সংকোচন বা পেশী প্যারালাইজড হয়ে আসা, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরা, ঝিমুনি ভাব, খিচুনি হওয়া, মুখ দিয়ে লালা পড়া, চোখের পাতা পড়ে আসা/অস্বস্তি হওয়া ইত্যাদি এদের বিষের লক্ষণ প্রকাশ করে।

যেহেতু সহসাই এদের কামড়ের বিষয়টি বুঝা যায় না তাই এদের নিরব ঘাতক বলা হয়।

কালাচ যদিও খুবই চঞ্চল সাপ, তবুও আঘাত বা ভয় না পেলে কামড় দেয়ার সম্ভাবনা কম। তবুও যদি কামড় দেয়, তাহলে দ্রুত নিকটস্থ সদর হাসপাতাল অথবা সরকারি মেডিক্যালে নিতে হবে এবং দ্রুততম সময় (১০০ মিনিট) এর মধ্যে এন্টিভেনম দিতে হবে। কেননা কালাচের কামড়ে বিনা চিকিৎসায় গড়ে ৪-৫ ঘন্টার মধ্যে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যায়।

উল্লেখ্য: কালাচ / কমন ক্রেইটের ড্রাই বাইট খুব রেয়ার।

লেখা: Arefin Nabil

ছবি: WSRTBD ও ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

সাপ সম্পর্কে বিষদে জানতে ও নিকটবর্তী রেসকিউয়ারের সাথে যোগাযোগ করতে আমাদের মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন।

অন্যান্য সাপ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *