বাংলা নাম : শঙ্খচূড়
ইংরেজী নাম : King Cobra
বৈজ্ঞানিক নাম : Ophiophagus hannah
King Cobra বা শঙ্খচূড় বা রাজগোখরা Elapidae পরিবারের Ophiophagus গণের এবং পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম বিষধর সাপের প্রজাতি। যদিও ইতিমধ্যে এদের আরো কিছু প্রজাতির বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এরা লম্বায় প্রায় ১৯/২০ ফুট দৈর্ঘ্যেরও হতে পারে। বন্যপ্রাণী আইন ২০১২ অনুযায়ী বাংলাদেশে এই সাপটি সংরক্ষিত।
এশিয়া মহাদেশে প্রাপ্ত তীব্র বিষধর প্রজাতির সাপগুলোর মধ্যে কিং কোবরা অন্যতম। এদের বিষমূলত নিউরোটক্সিন। তবে এতে সাইটোটক্সিনও মিশ্রিত আছে।
এরা এক কামড়ে প্রায় 420mg বিষ প্রয়োগ করতে পারে। LD50 পরীক্ষায় এদের বিষের মাত্রা 1.5 – 1.7 mg/kg। এদের একটি ছোবল পূর্ণবয়স্ক বিশাল হাতিকেও মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট।
রাজগোখরা সাপেরা মূলত দিবাচর প্রকৃতির। এরা দিনের বেলাতেই শিকার করতে পছন্দ করে। তবে কিছু ক্ষেত্রে রাতেও এদের সক্রিয় থাকতে দেখা যায়। এরা প্রায় ৩৩০ ফুট দূর থেকেও মাটিতে শিকারের নড়াচড়ার কম্পন শনাক্ত করতে পারে।

প্রচলিত নাম: রাজগোখরা, আলত, কালাইন, আইরাজ।
চেনার উপায়ঃ এদের জুভেনাইল অর্থাৎ বাচ্চা অবস্থায় কালো দেহে হলুদ ব্যান্ড থাকে। তবে বয়সের সাথে সাথে এদের কালার সাই বর্ণ ধারণ করে। এবং হলুদ ব্যান্ডগুলো সাদা ব্র্যান্ডে পরিণত হয়ে ছোট হয়ে আসে। তবে বাংলাদেশ প্রাপ্ত রাজগোখরা বর্ণ একটু কালচে ধরনের হয়ে থাকে।
সাইজঃ রাজগোখরা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা বিষধর প্রজাতির সাপ। সাধারণত ১২/১৪ ফিট এবং অনেক সময় ১৮/১৯/২০ ফুটের দীর্ঘও হয়ে থাকে।
খাবারঃ এদের প্রধান খাদ্য হলো সাপ। তবে অন্যান্য ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, ব্যাঙ, গিরগিটি ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রয়েছে।
বাসস্থানঃ এদের বসবাস মূলত এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোতে যেমন ভারত, বাংলাদেশ, চীন, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস, মালয়েশিয়া, ভুটান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনে এদের দেখতে পাওয়া যায়।
প্রাপ্তিস্থলঃ আমাদের দেশে সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সুন্দবনাঞ্চলে এদের দেখতে পাওয়া যায়। রিসেন্টলি গতমাসেই চট্টগ্রাম হাটহাজারী নামক এলাকা এবং তার ক’দিন পরেই কক্সবাজারের একটি রিসোর্ট থেকে পর পর দুটি কিং কোবরা উদ্ধার করা হয়।
প্রজননঃ রাজগোখরা অভিপ্যারোস প্রকৃতির সাপ। অর্থাৎ মা সাপ ডিম পেরে বাচ্চা উৎপাদন করে। প্রজননকালে এরা একটু এগ্রেসিভ থাকে। ডিম পাড়ার সময়ে এরা পাতার ডিবিতে ডিম পাড়ে এবং মা সাপ ২ মাস ধরে সে ডিম পাহাড়া দিয়ে বাচ্চা ফুটায়।
লেখা: Farhad Asif

১৯৪৫ সালে এদের Ophiophagus গণে অন্তর্ভুক্তির পর এদেরকে এই গণের একমাত্র প্রজাতি বলেই মনে করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে King Cobra একটি নয় বরং চারটি আলাদা প্রজাতিতে বিভক্ত।
এত বড় বিস্তৃত এলাকা জুড়ে একটি প্রজাতিরই বসবাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অনেক হার্পেটোলজিস্ট বিস্মিত ছিলেন। কারণ, অঞ্চলভেদে এই প্রজাতিটির আকার, রঙ, আচরণ এবং বিষের মাত্রার পরিমানেও ছিলো ভিন্নতা। যা নির্দেশ করছিলো এটার একাধিক প্রজাতি থাকার সম্ভাবনা। এবং সেটাই, বর্তমান নতুন গবেষনার তথ্য অনুযায়ী, King Cobra আসলে চারটি পৃথক প্রজাতির একটি ‘রাজকীয় পরিবার’।
২০২১ সালের আগস্ট মাসে ভারতের কলিঙ্গ ফাউন্ডেশনের কিং কোবরা এক্সপার্ট এবং বায়োলজিস্ট Gowri Shankar Sir ও তার সহযোগীরা তাঁদের গবেষণায় এই বিষয়টি তুলে ধরেন। তাঁদের গবেষণার তথ্যানুযায়ী, কিং কোবরা’দের জিনগতভাবে চারটি আলাদা প্রজাতি রয়েছে (যদিও এর আগে Gowri Shankar Sir ৭ টি আলাদা প্রজাতি থাকতে পারে বলে ধারণা করেছিলেন)। দীর্ঘদিনের চেষ্টায়,
বিভিন্ন জায়গা থেকে এই গবেষনার জন্য তথ্য সংগ্রহ করে এই গবেষণাটি সম্পন্ন করা হয়।
Kng Cobra-এর নতুন চারটি প্রজাতগুলো হচ্ছেঃ
1. Northern King Cobra (Ophiophagus hannah)
2. Western Ghats king Cobra (Ophophagus kaalinga)
3. Sunda King Cobra (Ophiophagus bungarus)
4. Luzon King Cobra (Ophiophagus salvatana)
Snake Rescue Team Bangladesh এখন পর্যন্ত ৮টি King Cobra উদ্ধার করেছে এবং প্রথমবারের মত ডিম ফুটিয়ে ২৫ টি বাচ্চা উৎপাদন করেছে। সেগুলো পর্যবেক্ষন সাপেক্ষে বলা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্ত রাজগোখরো মূলত Northern King Cobra (Ophiophagus hannah) প্রজাতির।
লেখা: Pritom Sur Roy
ছবি: Farhad Asif ও সংগৃহীত।
সাপ সম্পর্কে বিষদে জানতে ও নিকটবর্তী রেসকিউয়ারের সাথে যোগাযোগ করতে আমাদের মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন।
অন্যান্য সাপ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন।