চন্দ্রবোড়া – Russell’s Viper

চন্দ্রবোড়া Russell's Viper

বাংলা নাম : চন্দ্রবোড়া

ইংরেজী নাম : Russell’s Viper

বৈজ্ঞানিক নাম : Daboia russelii

Russell’s viper (Daboia russelii) বা চন্দ্রবোড়া সাপ আমাদের উপমহাদেশে সর্বপ্রথম শনাক্ত করা হয় ১৭৯৭ সালে। George Shaw এবং Frederick Polydore Nodder ১৭৯৭ সালে চন্দ্রবোড়া সাপ নথিভুক্ত করেন। এর আগে ১৭৯৬ সালে সনামধন্য হার্পেটোলজিস্ট Patrick Russell  এর  লেখা ‘An account of Indian serpents, collected on the coast of Coromandel’ বইতে চন্দ্রবোড়া সাপের পরিচয় নথিভূক্ত করেছিলেন এবং তার নামের সম্মানেই চন্দ্রবোড়া সাপের নামকরণ Russell’s viper করা হয়।

তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশ অখণ্ডিত থাকায় বাংলাদেশ, ভারত কিংবা পাকিস্তানের আলাদা রেকর্ড হবার কোনো প্রশ্নই ছিলোনা, কেননা ঔপনিবেশিক শাসন আমলে ভারতীয় উপমহাদেশকে একটি অঞ্চল বলেই বিবেচনা করা হতো।

আলাদা ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া সাপ সর্বপ্রথম ১৯৮২ সালে ‘ Wildlife of Bangladesh: A Checklist’ বইয়ে নথিভূক্ত করেন প্রখ্যাত প্রাণিবিদ আলি রেজা খান স্যার। এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৯২ সালে আলি রেজা খান স্যারের লেখা ‘ বাংলাদেশের সাপ’ বইয়ে চন্দ্রবোড়া সাপের উল্লেখ পাওয়া যায়।

এথেকে পরিস্কার যে চন্দ্রবোড়া সাপের আদি বাসস্থান বাংলাদেশ, একথা অস্বীকার করে চন্দ্রবোড়া সাপ ভারত থেকে ভেসে এসেছে এমন মনে করার কোনো সুযোগ নেই।

এদেশে চন্দ্রবোড়া সাপের বাসস্থান কোথায়?

— ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত গবেষণা অনুযায়ী দেশের অন্তত ১৭ টি জেলায় চন্দ্রবোড়া সাপের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চল, গড়াই এবং পদ্মা তীরবর্তী অঞ্চল [ জেলার তালিকা ছবিতে সংযুক্ত ]। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে মুন্সিগঞ্জ সহ দেশের কতিপয় যায়গায় চন্দ্রবোড়া সাপের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

• সাম্প্রতিক সময়ে চন্দ্রবোড়া সাপের বিস্তার এবং সাপ-মানুষ সংঘাতের কতিপয় সম্ভাব্য কারনঃ

—  নাব্যতা সংকটে নতুন চড় সৃষ্টি যা চন্দ্রবোড়া সাপের আদর্শ বাসস্থান।

—  বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সরীসৃপের উপর তাপমাত্রার ব্যপক প্রভাব। তাপমাত্রার পরিবর্তনে সরীসৃপের বাসস্থান কিংবা আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়।

—  চড় অঞ্চলে কৃষি সম্প্রসারণ, এতে চন্দ্রবোড়ার পছন্দসই শিকার ইঁদুরের প্রভাবে সাপ-মানুষের দুরত্ব কমে যাওয়া।

—  নতুন বাসস্থানের সম্প্রসারণ হলেও পুরোনো বাসস্থান নষ্ট করে ফেলা, এতে সাপ সহসাই জনমানবের কাছাকাছি আসতে বাধ্য হচ্ছে।

—  প্রয়োজনীয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত ফসল  উৎপাদন, এতে শষ্যের প্রাচুর্যে ইঁদুরের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে এবং সাপ শিকারে লোভে ইঁদুরের কাছাকাছি বেশি অবস্থান করছে।

সংঘাতে করনীয়ঃ

—  চন্দ্রবোড়া সাপের মুখোমুখি হয়ে গেলে আপনি দেখার আগেই সাপ আপনাকে সতর্ক করবে। প্রেশারকুকারের মতো খুব জোড়ে ‘হিস হিস’ শব্দ করে নিজের অবস্থান জানান দেয়। এমতাবস্থায় নিরাপদ দুরত্ব বজার রেখে সেই স্থান পরিত্যাগ করলে সংঘাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। সাপ মারতে গেলে বা একেবারে সাপের গায়ের কাছে চলে গেলে সাপ প্রতিরক্ষার জন্য কামড় দিতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত চন্দ্রবোড়া সাপের দংশন হলে এক মুহুর্ত দেরী না করে এন্টিভেনম সমৃদ্ধ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। যথা সময়ে চিকিৎসা নিশ্চিত না করতে পারলে অঙ্গহানি এমনকি মৃত্যু হতে পারে। তাই সাপের কামড়ে ওঝার কাছে নয় বরং সঠিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে হয়।

মানুষ ভালো থাকুক, প্রকৃতির সন্তানেরাও ভালো থাকুক।

লেখা: সাহাদাত হোসেন।

ছবি: Md Tanvir Tasnim Ovi, Christopher Shannon ও সংগৃহীত।

সাপ সম্পর্কে বিষদে জানতে ও নিকটবর্তী রেসকিউয়ারের সাথে যোগাযোগ করতে আমাদের মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন।

অন্যান্য সাপ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *